মাত্র কয়েক সেকেন্ড বাকি ছিল ম্যাচ শেষ হওয়ার। ২-০ গোলের লিড হারিয়ে ২-২ গোলে ড্র করে মাঠ ছাড়তে যাচ্ছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বদলি খেলোয়াড় তৃষ্ণা রানীর এক দুর্দান্ত গোল যেন নতুন করে প্রাণ ফিরিয়ে দিল বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায়।
যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে, উমেলা মারমার দুর্দান্ত পাস থেকে বল পেয়ে প্রতিপক্ষের জালে বল ঠেলে দেন তৃষ্ণা। সেই গোলেই ৩-২ ব্যবধানে নেপালকে হারায় বাংলাদেশ, আর নিশ্চিত করে তাদের জয়রথ অব্যাহত রাখার গল্প।
প্রথমার্ধে দুই গোল দিয়ে এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে এসে প্রতিপক্ষের চাপে পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু তৃষ্ণার রুদ্ধশ্বাস গোল সেই চাপ আর হতাশার মেঘ সরিয়ে জয়ে রাঙিয়ে তোলে সন্ধ্যার আকাশ।
প্রথমার্ধে আধিপত্য বাংলাদেশের
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে বাংলাদেশ। মাত্র ১৩ মিনিটেই লিড পায় তারা।
মুনকি আক্তারের শট প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল চলে গেলেও গোললাইন পার হওয়ার আগে বলটি প্রতিহত করেন এক ডিফেন্ডার। সেই বল থেকেই ঠাণ্ডা মাথায় গোল করে দলকে এগিয়ে নেন সিনহা জাহান শিখা।
এর কিছুক্ষণ পর ৩৬ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মোসাম্মৎ সাগরিকা। বাঁ দিক থেকে শান্তি মার্ডির দারুণ এক ক্রস গোলমুখে পান শিখা, যার শট ঠেকালেও বল তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন সুজাতা তামাং। সেই ফাঁকেই সুযোগ কাজে লাগান সাগরিকা।
দ্বিতীয়ার্ধে নাটকীয় মোড়
বিরতি থেকে ফিরে বাংলাদেশ ছন্দ হারাতে শুরু করে। তার আগেই ম্যাচের ৫৫ মিনিটে এক হাতাহাতির ঘটনায় বাংলাদেশের সাগরিকা ও নেপালের সিমরান রায়—দুজনকেই লাল কার্ড দেখান ভুটানের রেফারি। ফলে দুই দলই নামে ১০ জন করে খেলোয়াড় নিয়ে।
৭৭ মিনিটে নেপাল ব্যবধান কমায়। বাংলাদেশের জয়নব বিবির ফাউলের কারণে পেনাল্টি পায় নেপাল, এবং তা থেকে গোল করেন আনিশা রায়। এরপর ৮৬ মিনিটে পূর্ণিমা রায়ের আড়াআড়ি পাস থেকে মিনা দেউবা গোল করে ম্যাচে সমতা আনেন।
বাংলাদেশের হাই-লাইন ডিফেন্স ব্যর্থ হয় অফসাইড ফাঁদ তৈরি করতে, ফলে সেই সুযোগেই সমতায় ফেরে নেপাল।
শেষ দৃশ্যপটে তৃষ্ণার নায়কোচিত আবির্ভাব
যখন মনে হচ্ছিল ম্যাচ ড্রই হবে, তখনই ম্যাচের যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে বদলি হিসেবে নামা তৃষ্ণা রানী মারমার পাস থেকে গোল করে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় এনে দেন উল্লাস আর উন্মাদনা।
রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই মাঠে পড়ে খুশির জোয়ার, বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। আর বিপরীতে নেপালের গোলরক্ষক সুজাতা তামাংয়ের চোখে জল, শেষ মুহূর্তে এমন পরাজয় যেন মেনে নিতে পারছিল না তার দল।
সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ
-
প্রথম ম্যাচে ৯-১ ব্যবধানে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শুরু করেছিল পিটার বাটলারের শিষ্যারা।
-
দ্বিতীয় ম্যাচেও জয় তুলে নিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্দান্ত গতিতেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ দল।
-
তৃষ্ণার গোল এই জয়কে করেছে আরও স্মরণীয় ও আবেগঘন।
এই জয় শুধু এক ম্যাচ জয়ের গল্প নয়, এটি এক অধ্যবসায়, আবেগ আর লড়াইয়ের প্রতীক। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ার যে মানসিকতা—তৃষ্ণার গোলে তারই সেরা প্রতিফলন ঘটল।