সিলেটের তিন যুবককে কানাডা পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে নেপালে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মানবপাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে। তিন বছর ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
দক্ষিণ সুরমার কুচাই এলাকার হাফিজুর রহমান, মোমিনখলার এম এ মান্নান ও গোলাপগঞ্জের শাহরিয়ার রহমান রনি জানান, মিরাবাজারের মিজানুর আমিন নামে এক ব্যক্তি রিজওয়ান নামের পরিচিতর মাধ্যমে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। পরে তিনি নেপাল হয়ে সরাসরি ফ্লাইটে মাত্র ১২ লাখ টাকায় কানাডা পাঠানোর প্রস্তাব দেন। কানাডায় পৌঁছার পর আরও ৫ লাখ টাকা পরিশোধের শর্ত ছিল।
তিন যুবক জানান, নেপালে পৌঁছানোর পর তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে নির্জন স্থানে আটকে রাখা হয়। এরপর মারধর করে পরিবারের কাছে কানাডায় পৌঁছে গেছে বলে মিথ্যা তথ্য দিতে বাধ্য করা হয় এবং এডিট করা ছবি-ভিডিও পাঠিয়ে টাকা আদায় করা হয়। এ সময় তাদের হাত-পা বেঁধে রাখা হয় এবং একজনের হাতে সিগারেটের আগুনের দাগও দেওয়া হয়।
এম এ মান্নান বলেন, “বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে এমন প্রতারণা করবে কখনো ভাবিনি। ব্যবসাও বন্ধ করে দিয়েছিলাম কানাডা যাওয়ার আশায়।”
হাফিজুর জানান, “ভিডিও ও ভুয়া সাউন্ড বাজিয়ে আমাদের পরিবারকে বুঝানো হয় আমরা ফ্লাইটে আছি।”
শাহরিয়ার রনি বলেন, “আমাকে প্রচুর মারধর করা হয়। অসুস্থ হয়ে পড়লে ইনহেলার আনা হয়।”
পরিবার থেকে মোট ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর তাদের নেপালের কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের পাশে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় পরিচিতদের সহায়তায় তারা দেশে ফেরেন।
মামলা ও উদ্ধার অভিযান
ঘটনার ব্যাপারে পরিবার ব্র্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ব্র্যাক সিআইডি ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতায় মামলার প্রক্রিয়া শুরু করে। এক অভিযানে মিজানুরকে আটক করা হয়। আটক হওয়ার খবর পাচারকারীদের কাছে গেলে তারা নেপালে থাকা তিন যুবককে ছেড়ে দেয়।
ব্র্যাকের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর শরিফুল হাসান জানান, ভিসামুক্ত প্রবেশ ও অন-অ্যারাইভাল সুবিধার কারণে মানবপাচারকারীরা নেপালকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। কানাডা, ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর নামেও এ ধরনের প্রতারণা বাড়ছে। তিনি দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর পাশাপাশি বিদেশে বিপদে পড়লে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।


















