সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে এখনো ক্ষীণ আশার প্রদীপ জ্বলছে। কারণ, এই আসনে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রার্থীকে অফিসিয়ালি মনোনয়ন দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি বিএনপি। এতে করে এই আসনকে ঘিরে ‘আরিফ ক্লাইম্যাক্স’ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
৩ নভেম্বর বিএনপি ঘোষিত ২৩৭ জন প্রার্থীর তালিকায় সিলেট-৪ আসনকে “পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে” ক্যাটাগরিতে রাখা হয়। ফলে আসনটি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রচারণার জন্য উন্মুক্ত থেকে যায়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন—বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, দলের সহ-সভাপতি আব্দুল হেকিম চৌধুরী, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমেদ, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম এবং বিএনপি থেকে পদত্যাগী নেতা অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান।
৫ নভেম্বর রাতে পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়। ওই রাতে সাবেক সিটি মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী নিজেই জানান—বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে তিনি সিলেট-৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন। এ ঘোষণার পর গণমাধ্যমে তার মনোনয়ন পাওয়ার খবর প্রচারিত হয় এবং সিলেটসহ সারাদেশে রাজনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
তবে, এখনো পর্যন্ত দলের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি না আসায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়। ৭ নভেম্বর থেকে মিফতাহ সিদ্দিকী ও বদরুজ্জামান সেলিম বাদে বাকি তিনজন আবারও মাঠে নেমেছেন। তাদের মধ্যে আব্দুল হেকিম চৌধুরী ও হেলাল উদ্দিন আহমেদের অনুসারীরা “বহিরাগত প্রার্থী”র বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। তারা গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন ইউনিয়নে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে স্থানীয়দের অনাস্থা প্রকাশ করেছেন।
হেলাল উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি এখনো গণসংযোগে আছেন এবং কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। অন্যদিকে অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান ৭ নভেম্বর জৈন্তাপুরের দরবস্ত বাজারে গণসংযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, “দলের পক্ষ থেকে এখনো এই আসনে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি, তাই আমি মনোনয়নের প্রত্যাশায় মাঠে আছি।”
অন্যদিকে আরিফুল হকের প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকে মিফতাহ সিদ্দিকী ও বদরুজ্জামান সেলিম মাঠের প্রচারণা বন্ধ রেখেছেন। মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, “দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, যদিও অফিসিয়ালি এখনো প্রার্থী ঘোষণা হয়নি।”
আব্দুল হেকিম চৌধুরীও জানিয়েছেন, “দলের সব সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে নেব।”
কিন্তু মাঠের বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় নেতাদের একটি অংশ এখনো কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। তারা দাবি করছেন, দীর্ঘদিন এলাকার রাজনীতি ও সংগঠনে সক্রিয় স্থানীয় নেতাদের বাদ দিয়ে “বহিরাগত প্রার্থী” মনোনয়ন দেওয়া হলে তা কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করবে।
উল্লেখ্য, সিলেট-৪ আসনে বিএনপি অতীতেও হেভিওয়েট প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছে। এই আসন থেকে এম সাইফুর রহমান ও দিলদার হোসেন সেলিম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার সাবেক দুই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী দুই এক দিনের মধ্যেই এই আসনের মনোনয়ন নিয়ে চলমান ধোঁয়াশা কেটে যাবে। দল খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে।


















