পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ এলাকার কৃষকদের জন্য নতুন এক প্রযুক্তির উদ্ধাবন করেছে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্রাক। শুস্ক মওসুমে জমিতে সেচ দেয়ার জন্য সোলার প্যানেল চালিত একটি মোবাইল সেচ পাম্প মেশিন তৈরী করা হয়েছে। এটি এমন ভাবে তৈরী করা হয়েছে যা সহজেই যে কেউ চাইলে যে কোন স্থানে বসিয়ে পুকুর,খাল কিংবা জলাধার থেকে সোলার চালিত পাম্প এর মাধ্যমে পানি তুলে জমিতে সেচ দিতে পারবেন। এ ছাড়া সেচ পাম্প পরিবহনের জন্য যে সোলার প্যানেল সমৃদ্ধ অটোরিকশাটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটিরও বহুবিদ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। সেচ কাজ না থাকলে সোলার চালিত এই অটোরিকশা দিয়ে পন্য পরিবহন সহ-যাত্রী পরিবহন করারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নতুন এই প্রযুক্তি স্থানীয় কৃষকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রাথমিক ভাবে এটি তৈরী করতে আকার ভেদে ৭ থকে ৯ লাখ টাকা খরচ হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জলাবায়ু পরিবর্তন সহ অতি খড়ার কারনে নানামুখী সংকটের মধ্যে পরছে উপকূলীয় এলাকার কৃষকরা। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অনাবৃষ্টির কারনে জমিতে সেচ এর ব্যবস্থা করা। তবে সেচ যন্ত্র, তেল সহ পরিবহন এবং সার্বিক বিষয় ব্যয় বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক সেচ দিয়ে জমিতে ফসল আবাদে আগ্রহ দেখান না। তবে এই সমস্যা সমাধানে নতুন এক প্রযুক্তির উদ্ধাবন করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির আওতায় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্রাকের সহযোগিতায় সৌরবিদ্যুৎ চালিত মোবাইল সেচ পাম্প তৈরী করা হয়েছে।
এর ফলে স্থানীয় কৃষকরা এখন সহজেই কম ব্যয়ে জমিতে সারা দিন মাত্র ৫ থেকে ৭শ টাকা খরচ করে সেচ দিতে পারছেন।
সোলার চালিত মোবাইল সেচ পাম্প এর চালক মোঃ সজিব বলেন ‘আমি এখন প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাম্প চালাই। যারা পানি নেন, তারা খুশি। তাদের খরচ কমেছে, আমারও কিছু আয় হচ্ছে। এ ছাড়া যখন সেচ দেয়ার কাজ থাকে না তখন এই অটোরিকশায় করেই মানুষ এবং বিভিন্ন কৃষি পন্য পরিবহন করি। সিজনের শুরুতে সার-বীজ পরিবহন করতে কৃষকরা আমাকেই খবর দেয়।’
স্থানীয় কৃষক নিতাই চন্দ্র জানান, ‘আমাদের জমিতে সেচ দেয়ার প্রয়োজন হলে আমরা সজিব (সেচ পাম্প চালক) কে ফোন দিলই সে তার পাম্প নিয়ে পৌছে যায়। খালের পাড়ে কিংবা পুকর পাড়ে মেশিন বসিয়ে দিলে সৌর বিদ্যুৎ এর মাধ্যমে পানি উঠতে থাকে। এখানে যেমন ব্যয় কম হয় তেমনি পরিবহন সহ অনান্য বিষয়ে ঝামেলা নেই। এটি আমাদের জন্য বেশ উপকারী একটি প্রযুক্তি।
ব্রাকের ক্লাইমেট চেইঞ্জ প্রোগ্রামের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার তৌসিফ আহমেদ কুরাইশি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষকরা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন। এই সৌরচালিত সেচ প্রযুক্তি শুধু তাদের কৃষিকাজ সহজ করছে না বরং খরচ কমিয়ে আয়ের নতুন পথ তৈরি করছে। এটি পরিবেশবান্ধব, টেকসই এবং ভবিষ্যতের কৃষির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উদ্ভাবন। আমরা ধাপে ধাপে এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃত করার পরিকল্পনা নিয়েছি।’
ব্রাক এই শুধু প্রযুক্তি সরবরাহ করার পাশপাশি কীভাবে সৌর প্যানেল র¶ণাবে¶ণ করতে হয়, কীভাবে পানির অপচয় রোধ করতে হয় এসব বিষয় সচেতনতা, দ¶তা ও দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার প্রযুক্তি গুলো কৃষকদের ছড়িয়ে দিতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।


















