স্থানীয় নাকি বাইরের প্রার্থী—এই বিতর্কে উত্তাল হয়ে উঠেছে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসন। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে এই আসনে মনোনয়ন দেওয়ার নির্দেশের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই মাঠে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই স্থানীয় পর্যায়ে মিছিল–সমাবেশ হচ্ছে।
এদিকে আরিফুল হক চৌধুরীও থেমে নেই। শুক্রবার থেকে তিনি সিলেট-৪ আসনে টানা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল ইউনিয়নের তোয়াকুল বাজারে বিএনপির একাংশ জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করেছে। একই দাবিতে অন্য একটি অংশ আবদুল হাকিম চৌধুরীর পক্ষেও সভা করেছে।
হেলাল উদ্দিনের পক্ষে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি উমর আলী, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, ছাত্রদল নেতা জুয়েল আহমদ, শ্রমিক দল নেতা শাহীনূর আহমেদ প্রমুখ।
বিএনপি গত ৩ নভেম্বর ২৩৭টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও সিলেট-৪ ও সিলেট-৫ আসনের নাম তখন প্রকাশ করা হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেট-১ আসনে মনোনয়ন না পেয়ে হতাশ হয়েছিলেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। পরে তাঁকে ঢাকায় ডেকে পাঠান দলের শীর্ষ নেতারা। চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি জানান, তাঁকে সিলেট-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এরপর থেকেই আরিফুল মাঠে নামেন এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির একটি অংশ তাঁর প্রার্থিতার বিরোধিতা শুরু করে। শনিবার থেকে আবদুল হাকিম চৌধুরীর সমর্থকেরা মশাল মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে।
গতকাল সন্ধ্যায় হেলাল উদ্দিন আহমদের সমর্থনে মিছিল থেকে স্লোগান দেওয়া হয়—
“মানি না মানব না, হেলাল ছাড়া বুঝি না”,
“ধানের শীষে লোকাল চাই, লোকাল মোদের হেলাল ভাই”,
“লোকাল না বাইরা, লোকাল লোকাল”।
এ বিষয়ে হেলাল উদ্দিন আহমদ বলেন,
“নেতা–কর্মীরা আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে মিছিল–সমাবেশ করছেন, এমনটা শুনেছি। তবে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দল যা বলবে, তাই মেনে নেব। দল যেন তৃণমূলের মনোভাব বিবেচনা করে প্রার্থী নির্ধারণ করে—এই প্রত্যাশা করি।”
অন্যদিকে গতকাল সন্ধ্যায় ফতেপুর বাজারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচির সমর্থনে আবদুল হাকিম চৌধুরীর নেতৃত্বে সভা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ফতেপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইসলাম উদ্দিন, আর বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহবুব আলম, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন এবং যুবদলের আহ্বায়ক শাহজাহান সিদ্দিক।
অন্যদিকে, সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দিনভর গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ ও সমাবেশে অংশ নেন। সকালে জলুরমুখ গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি বলেন,
“সিলেট-৪ আসনের সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো আমার জানা। আমাকে নির্বাচিত করলে এলাকার তিনটি উপজেলাতেই আমূল পরিবর্তন আনব।”
স্থানীয় বিএনপির তথ্য অনুযায়ী, এই আসনে আরিফুল হক চৌধুরী, আবদুল হাকিম চৌধুরী ও হেলাল উদ্দিন আহমদ ছাড়াও কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী জেবুন্নাহার সেলিম, সাবেক মহানগর সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহস্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামানও মনোনয়নপ্রত্যাশী।


















